পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল যাওয়ার ট্রেন ভাড়া ও সময়সূচী

বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রয়াসী পদ্মা সেতু দেশের মানুষের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর, এটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি যুক্ত করেছে। এর ফলে ঢাকা থেকে খুলনা, বেনাপোলসহ অন্যান্য শহর ও অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ সহজতর হয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম সুবিধা হলো পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল যাওয়ার ট্রেন

জাহানাবাদ এক্সপ্রেস

জাহানাবাদ এক্সপ্রেসে খুলনা থেকে ঢাকা শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৭৪০ টাকা, এসি সিট ৮৮৫ টাকা, এসি বার্থ ১৩৩০ টাকা। নওয়াপাড়া থেকে ঢাকা শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৪১০ টাকা, স্নিগ্ধা ৬৮৫ টাকা, এসি সিট ৮২০ টাকা, এসি বার্থ ১২৩০ টাকা।

সিঙ্গিয়া থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৯৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৬৬০ টাকা, এসি সিট ৭৯০ টাকা, এসি বার্থ ১১৮০ টাকা। নড়াইল থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৭০ টাকা, স্নিগ্ধা ৬১৫ টাকা, এসি সিট ৭৪০ টাকা, এসি বার্থ ১১১০ টাকা।

লোহাগাড়া থেকে ঢাকা শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৫০ টাকা, স্নিগ্ধা ৫৮৫ টাকা, এসি সিট ৭০০ টাকা, এসি বার্থ ১০৫০ টাকা। কাশিয়ানী জংশন থেকে ঢাকা শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩০৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৬০৫ টাকা, এসি সিট ৫০৫ টাকা, এসি বার্থ ৯১০ টাকা।

ভাঙ্গা জংশন থেকে ঢাকা শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ২৬০ টাকা, স্নিগ্ধা ৪৩৫ টাকা, এসি সিট ৫২০ টাকা, এসি বার্থ ৭৮০ টাকা।

রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস

রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে বেনাপোল থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ৪৫৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৭৫৫ টাকা, এসি সিট ৯০৫ টাকা, এসি বার্থ ১৩৫৫ টাকা। যশোর থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ৪১০ টাকা, ৬৮৫ টাকা, এসি সিট ৮২০ টাকা, এসি বার্থ ১২৩০ টাকা। নড়াইল থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৭০ টাকা, স্নিগ্ধা ৬১৫ টাকা, এসি সিট ৭৪০ টাকা, এসি বার্থ ১১১০ টাকা।

লোহাগাড়া থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩৫০ টাকা, স্নিগ্ধা ৫৮৫ টাকা, এসি সিট ৭০০ টাকা, এসি বার্থ ১০৫০ টাকা। কাশিয়ানী জংশন থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ৩০৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৫০৫ টাকা, এসি সিট ৬০৫ টাকা, এসি বার্থ ৯১০ টাকা।

ভাঙ্গা জংশন থেকে ঢাকা শোভন চেয়ারের ভাড়া ২৬০ টাকা, স্নিগ্ধা ৪৩৫ টাকা, এসি সিট ৫২০ টাকা, এসি বার্থ ৭৮০ টাকা। এক্ষেত্রে শোভন চেয়ার ছাড়া অন্যান্য সিটের ভাড়ার সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত হবে।

ট্রেনের সময়সূচি

জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভোর ৬টায় খুলনা থেকে ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। ঢাকা রুটে যাত্রাবিরতি করবে নওয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন ও ভাঙ্গা জংশনে। এরপর বেলা ১১টায় ঢাকা থেকে ট্রেনটি রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস নামে ছেড়ে যশোরের বেনাপোলে পৌঁছবে দুপুর আড়াইটায়। বিকেল ৩টায় ফের এটি বেনাপোল থেকে ছেড়ে ঢাকা পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে। রাত ৮টায় ট্রেনটি জাহানাবাদ এক্সপ্রেস নামে আবার ঢাকা থেকে যাত্রা করে খুলনায় পৌঁছবে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে।

পদ্মা সেতু: এক নজর

পদ্মা সেতু, যেটি দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলির মধ্যে একটি, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক সৃষ্টি করেছে। পদ্মা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ, যা ঢাকা এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে যাত্রীদের সময় এবং খরচ কমানোর পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও অনেক সহজ হয়েছে। এর ফলে খুলনা, বেনাপোল, শ্যামনগর এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকা উন্নত যোগাযোগ সুবিধা লাভ করেছে।

পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন সার্ভিস: নতুন যুগের সূচনা

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর, বাংলাদেশ রেলওয়ে ঢাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ আরও দ্রুত এবং সহজ করতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল যাওয়ার ট্রেন সার্ভিস শুরু হওয়ার ফলে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা খুব সহজেই রাজধানী ঢাকায় আসতে এবং সেখানে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন।

ঢাকা থেকে খুলনা যাওয়ার ট্রেন সার্ভিস

ঢাকা থেকে খুলনার মধ্যে যাত্রী চলাচল ছিল সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এই ট্রেন সার্ভিস আরও দ্রুত এবং সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে। বর্তমানে ঢাকা-খুলনা রেলপথ যাত্রার জন্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে এই পথে ট্রেন চলাচলের সময় কমে গেছে, যা যাত্রীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।

খুলনা হলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম প্রধান শহর এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের পর এর গুরুত্ব অপরিসীম। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচলের ফলে খুলনা ও এর আশেপাশের অঞ্চলের মানুষের জন্য ঢাকায় আসা আরও সহজ হয়েছে। খুলনা থেকে ঢাকায় পৌঁছানোর সময়েরও বেশ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

ঢাকা থেকে বেনাপোল যাওয়ার ট্রেন সার্ভিস

বেনাপোল, যা বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর, কলকাতার সাথে সড়ক ও রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত। আগে, বেনাপোল যেতে বা আসতে অনেক সময় এবং কষ্ট পোহাতে হতো, তবে পদ্মা সেতুর কারণে এই সমস্যা দূর হয়েছে। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে, খুলনা থেকে বেনাপোল যাওয়া অনেক দ্রুত এবং সুবিধাজনক হয়ে উঠেছে।

বেনাপোল শহর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে অবস্থিত, এবং এই শহরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায়, বেনাপোলের ব্যবসায়ী ও যাত্রীরা সহজেই ঢাকায় পৌঁছাতে পারছেন, যা দেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে।

ট্রেনের সুবিধা

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল যাওয়ার ট্রেন সার্ভিসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা রয়েছে, যা যাত্রীদের জন্য প্রস্তাবিত:

  1. সময় সাশ্রয়: ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রীরা পদ্মা সেতু হয়ে সহজে এবং দ্রুত খুলনা বা বেনাপোল পৌঁছাতে পারেন। সেতু হওয়ার কারণে ট্রেনের সময় অনেক কমে গেছে, যা যাত্রীদের সুবিধা দিচ্ছে।
  2. স্বস্তি ও নিরাপত্তা: ট্রেনে যাত্রা একটি নিরাপদ এবং আরামদায়ক অভিজ্ঞতা। সেতু চালু হওয়ার পর ট্রেনের চলাচলও অনেক সুষ্ঠু এবং নিরাপদ হয়েছে।
  3. অর্থনৈতিক সুবিধা: ট্রেনের ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এটি মধ্যবিত্ত এবং সাধারণ মানুষের জন্য একটি আর্থিকভাবে লাভজনক পরিবহন মাধ্যম। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ট্রেনের চলাচল আরও দ্রুত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের জন্যও এটি এক বড় সুযোগ।
  4. পরিবেশবান্ধব: ট্রেন পরিবহন পরিবেশের জন্য অনেক সুবিধাজনক, কারণ এটি সড়ক পরিবহনের তুলনায় কম কার্বন নির্গমন করে এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনে।

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল যাওয়ার ট্রেনের ভবিষ্যত

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল যাওয়ার ট্রেন সার্ভিসের আগামী দিনের পরিকল্পনা আরো বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিভিন্ন রুটে ট্রেন সার্ভিস বৃদ্ধি এবং আধুনিক ট্রেনের সংযোজন এই অঞ্চলের জন্য আরও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।

এছাড়া, ভবিষ্যতে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে আরও নতুন রেলপথ এবং ট্রেন সার্ভিস চালু হলে এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করবে। বিশেষ করে, খুলনা, বেনাপোল এবং অন্যান্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শহরগুলোর সাথে ঢাকার সংযোগ আরও দৃঢ় হবে।

উপসংহার

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতে এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল যাওয়ার ট্রেন সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও রাজধানীর মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। এটি শুধু যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক নয়, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য ও দেশের অর্থনীতির উন্নয়নেও এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে, এবং এর সুফল এখন স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে।

Leave a Reply